বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ভারতের পর্যটন খাতে মন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভারতে বাংলাদেশিদের যাতায়াত কমে যাওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশি পর্যটকরা সাধারণত কেনাকাটা এবং চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ভারত ভ্রমণে যাওয়া মোট পর্যটকদের ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশি। অন্য যে কোনো জাতীয়তার তুলনায় এই হার সর্বাধিক। তবে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে ভারতে যাতায়াত কমে গেছে বাংলাদেশিদের।
বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মো. তসলিম আমিন শোভন ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য, বহির্গামী যাত্রীদের হার এখানে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। অধিকাংশই চিকিৎসার জন্য (৮০ শতাংশের বেশি) কেনাকাটা (১৫ শতাংশ) এবং অবকাশ (৫ শতাংশ) ভ্রমণ করেন । কলকাতা একটি পছন্দের শপিং হাব, বিশেষ করে উৎসবের আগে, অন্যদিকে সিকিম, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং কাশ্মিরও দর্শকদের আকর্ষণ করে।’
ভারতের জন্য চিকিৎসা পর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
জ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী গ্রুপ কেয়ারএজ রেটিং-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মোট চিকিৎসা পর্যটন প্রবাহের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বাংলাদেশি। ২০২২ সালে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৪ হাজার ৬৭। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল চার লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০-এ।
এনডিটিভির হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।
ইকোনমিক টাইমস বাংলাদেশের ট্রাভেল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে নাগরিকদের বহির্মুখী ভ্রমণ ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
একটি বাজেট এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের ফ্লাইটে যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।
কেয়ারএজ রেটিং এর সহযোগী পরিচালক ডি নবীন কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশি মেডিকেল পর্যটকেদের ওপর নির্ভরশীল হাসপাতালগুলোতে প্রভাব পড়বে। এই পর্যটকদের উপর উচ্চ নির্ভরশীল হাসপাতালগুলো ২০২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রাজস্ব হ্রাসের সম্মুখীন হতে পারে।’
অবশ্য অনেকে বলছেন এর প্রভাব ইতিমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে।
কলকাতার মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানি Indiatreatments.com-এর প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা সামিত বেজ জানান, তার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা নিতে আসত। এই সংখ্যা এখন মাসে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় জনের মধ্যে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতায় আগস্টের শুরুতে হোটেল ও লজগুলো অর্ধেক খালি হয়ে গেছে।
সেন্ট্রাল কলকাতা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারমিত সিং টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘গত কয়েক দিনে হোটেলগুলো ৫০ শতাংশ খালি হয়ে গেছে।’
মার্কুইস স্ট্রিটের নবাব রেস্তোরাঁর মালিক আরশাদ আলম বলেন, ‘ আমাদের ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল যারা এই আশেপাশের হোটেলগুলোতে থাকেন। এমনকি আমরা শুধু তাদের স্বাদের জন্য ভিন্ন খাবার তৈরি করি। গত কয়েকদিন ধরে নৈশভোজের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।’