মুখের ক্যান্সার সাধারণত মুখ এবং মুখ গহ্বরের আশেপাশে হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মুখের ক্যান্সারের রোগী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। পশ্চিমা বিশ্বে মুখের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার প্রায় ৬-৭ শতাংশ। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার নানা কারণ রয়েছে।
ডা. শতাব্দী, ওরাল ও ডেন্টাল সার্জন বলেন, ‘মুখের ক্যান্সার নারী, পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন জনের মুখের ক্যান্সার শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই রোগের মূল কারণ হচ্ছে তামাক এবং তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করা। যেমন সিগারেট, বিড়ি, পান, জর্দা— এসব জিনিস খেলে মুখের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়াও পান, সাদা পাতা, পানের সাথে জর্দা, সুপারি খাওয়ার ফলেও মুখের ক্যান্সার হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন করলে মুখের ক্যান্সার হতে পারে। যারা পান, জর্দা, সুপারি মুখের একটা অংশে অনেক সময় রেখে দেন তাদের মুখের ওই নির্দিষ্ট অংশের টিস্যু পরিবর্তন হয়ে মুখের ক্যান্সার হতে পারে।’
ডা. শতাব্দী ভৌমিক আরও বলেন, ‘মুখে যদি ভাঙা বা ধারালো দাঁত থাকে এবং ত্রুটিপূর্ণ গড়ন থাকে তাহলে সেখান থেকে আঘাত লেগে মুখের টিস্যু পরিবর্তন হতে পারে। এবং ক্যান্সার হতে পারে। কিছু ভাইরাস এবং বাক্টেরিয়ার কারণেও মুখের ক্যান্সার হতে পারে। যেমন সিফিলিস। এ ছাড়া খাদ্যাভাসে যদি ভিটামিন এ, সি এবং ই-এর ঘাটতি থাকে তাহলেও মুখের ক্যান্সার হতে পারে। পরিবারের কেউ যদি মুখের ক্যান্সার বা অন্য কোনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে জেনেটিক প্রভাবে সেই পরিবারের সদস্যদের মুখের ক্যান্সার বা অন্য ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।’
মুখের ক্যান্সার হলে মুখে ঘা হতে পারে যেটা সহজে সারবে না, ঢোক গিলতে ব্যথা অনুভূত হযবে, কথা বলতে অসুবিধা হযবে, জিহ্বা নাড়াতেও সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যা দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মুখের ক্যান্সার প্রথম পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থতার সম্ভাবনা শতভাগ। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে শনাক্ত হলে সম্ভাবনা থাকে ৮০-৯০ ভাগ। তৃতীয় পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৪০-৬০ ভাগ। চতুর্থ পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীর সুস্থতার হার কমে আসে ১০-২০ ভাগে। কিংবা তারও নিচে।