আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার আগেভাগেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। ছবির মতো ভেসে উঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখে মহানন্দা নদীর পাড়েই মনে হলেও এটি আসলে ১৫০ কিলোমিটার দূরে নেপাল ও সিকিম এলাকায় অবস্থিত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যান্য বছর অক্টোবর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা যেতো। কিন্তু এবার আগেভাগেই সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে উত্তরাকাশে উঁকি দিচ্ছে। মেঘমুক্ত আকাশে ভোর থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এটি দৃশ্যমান হচ্ছে। তেঁতুলিয়ার প্রায় সব স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা মনোমুগ্ধকর অপরূপ দৃশ্য খালি চোখে দেখা যায়।
তবে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সংলগ্ন সীমান্ত নদী মহানন্দার তীর এবং শালবাহান ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, পঞ্চগড়ে প্রতি বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দেয়, মেঘমুক্ত আকাশে খালি চোখে তার দেখাও মিলে। ভোরের আকাশে কালচে কাঞ্চনজঙ্ঘা, এরপর শুভ্র বরফের কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং দিনে শেষে সোনালী বর্ণের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক অপরূপ মনোরম দৃশ্য ধারণ করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এটি উত্তরাকাশে মিশে যায়। আবার বিকালে সূর্যাস্তের সময় পর্বত চূড়াটি পোড়ামাটির রূপ নেয়। এক কথায় নিজের চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্যতা বর্ণনা করার মত নয়।
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, তেঁতুলিয়ায় জেলা পরিষদের দুটি ডাকবাংলোর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি। উপজেলা প্রশাসনের পিকনিক কর্ণার ও বেরং কমপ্লেক্ষ নামে দুটি আবাসন রয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মহানন্দা কটেজ, কাজী ব্রাদার্স, সীমান্তের পাড়, দোয়েল আবাসিক হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেল গড়ে উঠেছে। আবাসিকগুলোতে রাতে থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করে আসতে হবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাইদুর রহমান জানান, কাজের ফাঁকে কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথম দেখলাম। চোখের সামনে স্পষ্ট খালি চোখে দেখা যাচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পর্যটকদের আনা গোনা বেড়ে যাবে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে এখানে অনেক মানুষই আয়ের মুখ দেখতে পায়।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, ভারি বর্ষণে ধুলিকনা কমে যাওয়া ও বৈশ্বিক আবহাওয়া ভালো এবং মেঘমুক্ত আকাশ থাকায় এবার সেপ্টেম্বর থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। যেদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে সেদিন আর দেখা যায় না। আবার কোন কোন দিন কিছুক্ষণের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে পাওয়া যায়।
পঞ্চগড় টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে তেঁতুলিয়ায় দৈনিক দুই থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক এখানে আসেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হন তার জন্য টুরিস্ট পুলিশের টহল টিম রয়েছে। আমরা নিরাপদ ভ্রমণে পর্যটকদের সব রকম সহযোগিতা করছি। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এখনো তেমন পর্যটক নেই। মূলত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এই পাঁচ মাস এখানে পর্যটকদের ভিড় থাকে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড় সম্ভাবনাময় পর্যটন ক্ষেত্র। এর মূল আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া ও পর্বতমালাল, যা পঞ্চগড় থেকে খালি চোখে দেখা যায়। ইতোমধ্যে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের আবাসনসহ সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।