আইইএলটিএস বা ইন্ট্যারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (International English Language Testing System) মূলত বিভিন্ন কাজের জন্য ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের একটি পরীক্ষা। প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি আইইএলটিএস টেস্ট দেওয়া হয়।
বিদেশ যাত্রা, মাইগ্রেশন বা পড়াশোনার জন্য এই টেস্ট অপরিহার্য একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। ৩ ঘণ্টা ব্যাপ্তির এই পরীক্ষায় আপনার চারটি ভাষাগত দক্ষতার মূল্যায়ন করা হয়।
ভাষাগত দক্ষতাগুলো হচ্ছে—শোনা (লিসনিং), বলা (স্পিকিং), পড়া (রিডিং) ও লেখা (রাইটিং)।
আপনি এই টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে?
আইইএলটিএস অন্য ১০টি সাধারণ পরীক্ষার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। অন্য পরীক্ষাগুলোয় সাধারণত সিলেবাস দেওয়া থাকে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বা লিখতে হয়। কিন্তু এখানে পরীক্ষা কাঠামোটা ভিন্ন। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি এই টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
ধাপ—১
আগে পরীক্ষার কাঠামোটি জেনে নিন
সর্বপ্রথমে আপনাকে জানতে হবে আইইএলটিএস পরীক্ষার কাঠামোটি কী। সাধারণত এই টেস্টে দুটি মডিউল থাকে।
— আইইএলটিএস অ্যাকাডেমিক
— আইইএলটিএস জেনারেল ট্রেনিং
আইইএলটিএস অ্যাকাডেমিক
যদি আপনি ইংরেজি ভাষা প্রচলিত কোনো দেশে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করতে চান বা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান, তাহলে আইইএলটিএস অ্যাকাডেমিক আপনার জন্য।
আইইএলটিএস জেনারেল ট্রেনিং
যদি আপনি কোনো দেশে মাইগ্রেশন করতে চান বা ডিগ্রি লেভেলের নিচে পড়াশোনা করতে চান, তাহলে আপনাকে আইইএলটিএস জেনারেল ট্রেনিংয়ের জন্য টেস্ট দিতে হবে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই কথা বলা এবং শোনার টেস্টগুলো প্রায় একই রকম, কিন্তু পড়া এবং লেখার টেস্টগুলো আলাদা হয়ে থাকে।
ধাপ—২
অনুশীলন করুন
বর্তমানে বাজারে আইইএলটিএসের অনেক প্রস্তুতিমূলক বই পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি যদি কোথাও আইইএলটিএসের জন্য ভর্তি হয়ে থাকেন, সেখানে আপনাকে কিছু বইপত্র দেওয়া হবে। আপনাকে অবশ্যই সেই বইগুলো থেকে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
তাছাড়া ইংরেজি ব্যাকরণ, ইংরেজি বাক্যের গঠন, শব্দের বানান প্রভৃতি নিয়ে বেশি করে পড়াশোনা করুন।
নিয়মিত নোট নিন, যে ব্যাপারগুলো বুঝতে সমস্যা হয়, সেগুলো নোট করে রাখুন এবং আপনার উত্তরগুলোও লিখে রাখুন। এই অনুশীলনগুলো নিয়মিতভাবে করলে পরীক্ষা দেওয়ার সময় আপনার কোনো অসুবিধাই হবে না। কারণ আপনি নিয়মিত অনুশীলন করে এসেছেন। এছাড়া কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে আপনার মেন্টরদের কাছ থেকে জেনে নিন। মকটেস্টে অংশ নিন।
ইংরেজি ভাষায় প্রতিদিন অন্তত এক পাতা লিখুন। হোক ভুল, হোক ঠিক—আপনি লিখে যান। একদিন দেখবেন, আপনার ভুলের পরিমাণ কমে এসেছে। আর এভাবেই আপনি দক্ষ থেকে দক্ষতর হয়ে উঠবেন।
ধাপ—৩
আপনার ইংরেজি দক্ষতা শানিত করুন
মনে রাখবেন, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন রাতারাতি সম্ভব নয়। এই ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে সময় এবং শ্রম দিতে হবে।
তাই, যত বেশি সম্ভব ইংরেজিতে কথা বলুন, লিখুন এবং পড়ুন। এই চর্চাকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ বানিয়ে ফেলুন। কথা বলার জন্য প্রয়োজনে একটি গ্রুপ বানান। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন। টেলিভিশন বা রেডিওতে ইংরেজি খবর দেখুন এবং শুনুন।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইংরেজি উচ্চারণের সঙ্গে পরিচিত হোন—বিশেষ করে ব্রিটিশ ইংলিশ, আমেরিকান ইংলিশ এবং অস্ট্রেলিয়ার ইংলিশ। সাব-টাইটেল ছাড়া ইংরেজি চলচ্চিত্র দেখার চেষ্টা করুন। চলচ্চিত্রে পাত্রপাত্রীরা কী বলছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
আইইএলটিএস পরীক্ষায় কী থাকে?
আগেই বলা হয়েছে যে আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউল থাকে। প্রতি মডিউলেই চারটি ভাগ থাকে—শোনা, বলা, লেখা এবং পড়া। ইংরেজিতে এদের বলা হয় Listening, Reading, Writing ও Speaking।
শোনা
সাধারণত ৪০টি প্রশ্ন থেকে পরীক্ষার্থীকে উত্তর দিতে হয়ে। এ অংশের ব্যাপ্তি ৩০ মিনিট। একটি রেকর্ডিং শুনে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের উত্তর দিতে হবে।
পড়া
পড়া বা রিডিং অংশে মোট ৩টি অনুচ্ছেদ থেকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় পাওয়া যাবে ১ ঘণ্টা। শব্দভাণ্ডার কম হলে, রিডিং সেকশনে পরীক্ষার্থীরা একটু অসুবিধায় পড়তে পারে।
লেখা
লেখা বা রাইটিং অংশে পরীক্ষার্থীর ইংরেজি লেখার দক্ষতা ও মান যাচাই করা হয়। সময় পাওয়া যায় ১ ঘণ্টা এবং এই সময়ের মধ্যে দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
আইইএলটিএসের রাইটিং অংশে মূলত দুটি কাজ থাকে। প্রথম কাজ বা টাস্ক হচ্ছে কোনো একটি গ্রাফের বিবরণ লিখতে হবে। আর পরের ধাপে বিশ্লেষণী কোনো একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হবে।
বলা
এই অংশে পরীক্ষার সময় প্রায় ১৪ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং পরীক্ষাটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে একজন পরীক্ষক পরীক্ষার্থীকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। দ্বিতীয় অংশে পরীক্ষার্থীকে কোনো বিষয়ে ২ মিনিট কথা বলতে হয়। আর শেষ অংশে পরীক্ষার্থীকে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আইইএলটিএস পরীক্ষকের সঙ্গে প্রায় ৫ মিনিটের মতো কথা বলতে হয়।
পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিপস
পরীক্ষার আগের দিন রাত থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগের রাতেই গুছিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন, খাওয়া আর ঘুমের যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।
পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাসা থেকে রওয়ানা দিন।
পরীক্ষার সময় আপনাকে যে রকম নির্দেশ দেওয়া হয়, ঠিক সেভাবেই তা মেনে চলুন।
অন্যের খাতা দেখা বা কোনো ধরনের অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবেন না।
ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা যাবে না। তাই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।
কোনো প্রশ্ন বা নির্দেশনা বুঝতে সমস্যা হলে দায়িত্বরত পরিদর্শককে অবহিত করুন।