ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, ভাষা সৈনিক ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এ এম হারুন-অর-রশীদ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
রাজধানীতে নিজ বাসায় শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আরশাদ মোমেন গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
পদার্থবিজ্ঞানী এ এম হারুন-অর-রশীদ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
হারুন-অর-রশীদ বরিশালের নলছিটির বাহাদুরপুর গ্রামে ১৯৩৩ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মকসুদ আলীও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে কেটেছে ড. রশীদের ছেলেবেলা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়ালেখা করেছেন।
দেশভাগের সময় সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন মকসুদ আলী এবং অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। হারুন-অর রশীদ ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোটা পূর্ব বাংলায় চতুর্থ হন। ১৯৫০ সালে আইএসসিতে প্রথম শ্রেণি পান। তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৫২ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করলেন। ১৯৫৩ সালে স্নাতক করেন পদার্থবিজ্ঞানে। এবারও প্রথম। এক বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
পিএইচডি শেষে বিলেতের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান। কিন্তু দেশের টানে ফিরে আসেন। বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন আণবিক শক্তি কমিশনে (১৯৬২ থেকে ’৬৭)। ১৯৬৭ সালে যোগ দেন ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। পরে পরিচালক হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ফিরে আসেন দেশে।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। একই সঙ্গে বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হন। দুবছর এই পদে ছিলেন। ১৯৮৫ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
হারুন-অর-রশীদ ১৯৭২, ১৯৮৬ ও ১৯৯৩ সালে নোবেল মনোনয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপমহাদেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী নোবেলজয়ী আবদুস সালামের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। একসঙ্গে গবেষণাও করেছেন। বিখ্যাত কোয়ান্টাম তত্ত্ববিদ সত্যেন বোসেরও স্নেহধন্য ছিলেন ড. রশীদ।
২০০৯ সালে পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ইংরেজি ও বাংলায় পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি।