
ভারতের আগ্রার তাজমহলের কথা জানেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। এই তাজমহল দেখার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও সবার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয় না। সেজন্যই হয়ত আগ্রার তাজমহলের অনুকরণে নারায়ণগঞ্জে শিল্পপতি চলচ্চিত্রকার আহসান উল্লাহ মনি নির্মাণ করেছেন বাংলার তাজমহল। আগ্রার বিখ্যাত মুঘল স্থাপত্যের এক রেপ্লিকাও বলা যেতে পারে এই সৌধটিকে।
১৯৮০ সালে আহসানউল্লাহ্ তাজমহলের প্রেমে পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজ দেশে এমন একটি তাজমহল বানাবেন। তার দেশের যেসব গরিব মানুষের ভারতে গিয়ে আসল তাজমহল দেখার সামর্থ্য নেই, তারা যেন নিজের দেশেই তাজমহল দেখার স্বপ্ন খানিকটা মিটিয়ে নিতে পারেন। তবে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, তার বাইরে অন্যান্য দেশের ভ্রমণার্থীরাও এই তাজমহল দেখতে যাবেন, সেটাই ছিল তার ইচ্ছে।
সোনারগাঁওয়ে ২০০৩ সালে তাজমহলের রেপ্লিকা বানানোর কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেশ ঘটা করে তার উদ্বোধন করা হয়। এই স্থাপত্য পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের তাজমহল নামে।
সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে অবস্থিত এটি। এটি তৈরি করতে প্রায় ৫ বছর সময় লাগে এবং এটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন। এটি প্রায় ১৮ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। আশেপাশে আরও ৫২ বিঘা জমি আছে পর্যটনের জন্য। এখানে দেখা যাবে চারপাশের সুন্দর আর মনোরম পরিবেশ, হাজার হাজার নাম না জানা পাখির কিচিরমিচির করা বিকেল আপনার মন ভালো করে দিবে।
আসল তাজমহলের মতোই এটির চার কোণে রয়েছে চারটে মিনার। মাঝখানের মূল ভবনটি টাইলস করা আর দারুণ সব পাথর দিয়ে মোড়ানো। এই ভবনে আহসানউল্লাহ্ এবং তার স্ত্রী রাজিয়ার জন্য কবরের স্থান সংরক্ষিত করা হয়েছে। সামনের ১০টা চমৎকার ফোয়ারায় মুগ্ধ করে দর্শকদের। চারদিকে ফুলের বাগান, দু’পাশে ভ্রমণার্থীদের জন্য বসার জায়গাগুলোও বেশ মনোরম।
এখানে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাজমনি ফিল্ম সিটি রেস্তোরাঁ। পিকনিকের জন্য খুব উপযুক্ত জায়গা। এছাড়া রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিওতে যে কোনো দর্শনার্থী ইচ্ছে করলে ছবি তুলতে পারেন।
‘বাংলার তাজমহল’কে ঘিরে বাইরে গড়ে উঠেছে মাটির গয়না, নানা রকমের হস্তশিল্প, জামদানি শাড়ি এবং আরো অনেক জিনিসপত্রের দোকান। কাছেই রয়েছে মিশরের পিরামিডের আদলে বানানো রেপ্লিকা। আছে শুটিং স্পট এবং সিনেমা হল। তাজমহলের অনুকরণে এই স্থাপত্য নির্মাণকে ভারত সরকার খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি।
বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে আহসানউল্লাহ্-র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সব মিটেও গেছে। বরং ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মিলনের প্রতীক হয়ে বাংলার তাজমহল এখনও পর্যটকদের মনোরঞ্জন করে চলেছে।
যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। আপনাকে যেতে হবে সোনারগাঁয়ের পেরাবো গ্রামে। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে অথবা গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র যাতায়াতের জন্য লোকাল ও স্পেশাল বাস আছে। ভাড়া বিশ থেকে ত্রিশ টাকা। প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড হয়ে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে পেরাবো গ্রামে যেতে হবে।