বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা বেড়েছে। আর খোলা তেলের দাম কমেছে লিটারপ্রতি ২ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমলেও বোতলজাতের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘কিছু টেকনিক্যাল কারণে খোলা সয়াবিনের দাম আমরা কমাতে পেরেছি। আর বোতল যেহেতু লেবেল করা থাকে এবং সিলড করা থাকে, ওখানে খুচরা পর্যায়ের ভ্যাট ফ্যাক্টরি পর্যায়ে আদায় করা হয়। ফলে খোলা তেলের বাজারে একটা ফ্লেক্সিবিলিটি আছে, যেটা বোতলজাত তেলের ক্ষেত্রে নেই।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ২ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৬৩ টাকা।
শুক্রবার থেকে এ দাম কার্যকর হবে।
নতুন দাম নির্ধারণ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্যতেল সমিতির একটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটি বৈঠক হয়েছে। আপনারা জানেন, ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা আমরা আন্তর্জাতিক বাজার মনিটর করি। বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের যৌক্তিক নির্দেশক মূল্য আমরা ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে অবগত হই, যাতে মূল্যটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এনবিআর একটা বিশেষ বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। আমরা হয়তো ধরে নিয়েছিলাম, আমদানি করার পর দাম বাড়বে। কিন্তু দুটো সার্কুলার ছিল। একটি হচ্ছে, আমদানি পর্যায়ের, আরেকটি ভোক্তা পর্যায়ের সরাসরি মিল গেট থেকে।’
আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এনবিআর খুবই তৎপর রাজস্ব সংগ্রহের জন্য। আমরা কিছু আলোচনা করার আগে, তেল উৎপাদনের মিলগুলোতে চিঠি চলে গেছে, ১৬ এপ্রিল থেকে যে মালগুলো বের হবে, তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে মাল বের করতে হবে। যদিও ইচ্ছা ছিল, একটু সময় নিয়ে ব্যাপারটা দেখব। কিন্তু আসলে সেই সুযোগ ছিল না।’
‘আমরা একটু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেছি, এ জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত না দেব, বাজারে সাপ্লাইয়ের একটা ব্যাঘাত ঘটবে। এটা যাতে না হয়, সে জন্যই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দাম বাড়াই, সেটা তাৎক্ষণিক কার্যকর হয় কেন, এমন প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে মিলগেট থেকে ভ্যাট দিয়ে পণ্য বের করতে হয়। যে কারণে এখানে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার সুযোগ থাকে না আমাদের কাছে। আর আমদানি করে মিলগেটে এনে প্রসেস করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে।’
‘খোলা সয়াবিন যেটা ১৪৯ টাকা ছিল লিটার, সেটা দুই টাকা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৪৭ টাকায় বিক্রি হবে। আর বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম ১৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়েছে। পাঁচ লিটার সয়াবিনের বোতল ৮০০ টাকা ছিল, সেটা বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপার পামওয়েলের দাম আগে নির্ধারণ করা ছিল না, এবার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লিটার ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে,’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তেলের মূল্য কমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু সব বোঝা যদি আমরা উৎপাদকের কাঁধে চাপিয়ে দিই, তাহলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে সাপ্লাই চেইনে অসুবিধা হবে। কাজেই সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সয়াবিন এ সমন্বয় করা হয়েছে।’